ফেসবুক পোস্টে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শিক্ষার্থীদের প্রতিবন্ধী প্রজন্ম উল্লেখ করায় লালমনিরহাটের কালীগঞ্জের কাকিনা উত্তর বাংলা কলেজের অধ্যক্ষ আবদুর রউফ সরকারের বিরুদ্ধে মামলা করতে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তাকে নির্দেশ দিয়েছে লালমনিরহাট জেলা প্রশাসন।
ওই ফেসবুক পোস্টে ‘বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের মূলনীতির সঙ্গে সাংঘর্ষিক’ দাবি করে কলেজের এক প্রভাষক লিখিত অভিযোগ দায়ের করার পর এই নির্দেশনা দিয়েছেন জেলা প্রশাসন।
আলোচিত সেই স্ট্যাটাসের একটি স্ক্রিনশটে দেখা গেছে, আবদুর রউফ সরকার লিখেছেন, ‘আমাদের চোখের সামনে একটি প্রতিবন্ধী প্রজন্ম বেড়ে উঠছে। যারা এদেশের ইতিহাস ঐতিহ্য জানে না। এদেশের সংস্কৃতির সাথে যাদের মানসিক যোগ নেই। এই কোটা সংস্কার আন্দোলনের পিছনে যারা মদদ দিচ্ছে, তাদের উদ্দেশ্য কোটা সংস্কার নয়; অন্য কিছু, যা কোমলমতি শিক্ষার্থীরা বুঝতে ভুল করেছে…।’
জেলা প্রশাসনের শিক্ষা শাখা থেকে গত সোমবার উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তাকে এই চিঠি দেওয়া হয়েছে। চিঠিটি গত বুধবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে।
জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সহকারী কমিশনার (শিক্ষা শাখা) এস এম শাফায়াত নুর স্বাক্ষরিত চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, ‘উত্তর বাংলা কলেজের ইংরেজি বিভাগের প্রভাষক এস তাবাসসুম রায়হান মুসতাযীর তামান্না একই কলেজের অধ্যক্ষ আবদুর রউফ সরকারের বিরুদ্ধে অভিযোগ দাখিল করেছেন। দাখিলকৃত অভিযোগে অধ্যক্ষ আবদুর রউফ সরকার বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শিক্ষার্থীদের প্রতিবন্ধী প্রজন্ম উল্লেখ করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বিপক্ষে তাঁর নিজস্ব ফেসবুক আইডিতে পোস্ট দেন, যা সাম্প্রতিক সময়ে সংঘটিত ছাত্র-জনতার বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের মূলনীতির সঙ্গে সাংঘর্ষিক।’
চিঠিতে আরও উল্লেখ করা হয়, দাখিল করা অভিযোগ ও অধ্যক্ষের ফেসবুক পোস্টের মর্মানুযায়ী কলেজের গভর্নিং বডির সদস্যদের সমন্বয়ে বিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ এবং উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তাকে এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট থানায় মামলা দায়েরের নির্দেশনা দেওয়ার জন্য নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হলো।
কালীগঞ্জ উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোবাশ্বির হোসেন চিঠি পাওয়ার তথ্য নিশ্চিত করে সাংবাদিকদের বলেন, প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ প্রক্রিয়া চলমান।
জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, উত্তর বাংলা কলেজের ইংরেজি বিভাগের প্রভাষক এস তাবাসসুম রায়হান মুসতাযীর গত রোববার দুপুর থেকে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে অনশন কর্মসূচি শুরু করেন। তিনি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শিক্ষার্থীদের প্রতিবন্ধী প্রজন্ম বলে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্ট দেওয়ায় অধ্যক্ষ আবদুর রউফের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানান। কলেজের গভর্নিং বডি অনিয়মতান্ত্রিকভাবে পরিচালিত হচ্ছে বলেও অভিযোগ করেন তিনি। পরে বিকেল পাঁচটার দিকে জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপার ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস দিলে অনশন ভঙ্গ করেন তাবাসসুম রায়হান।
কলেজশিক্ষক তাবাসসুম রায়হান মুসতাযীর বলেন, অধ্যক্ষের ফেসবুক পোস্টে যেভাবে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে লেখা হয়েছে, তা একপেশে ও ফ্যাসিস্ট সরকারের মনোভাবের প্রতিফলন। এ জন্য তিনি জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে অনশন করেছেন।
এ বিষয়ে মোবাইল ফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলেও অধ্যক্ষ আবদুর রউফ সরকার ফোন ধরেননি।
লালমনিরহাট জেলা প্রশাসক এইচ এম রকিব হায়দার সাংবাদিকদের বলেন, উত্তর বাংলা কলেজের অধ্যক্ষ বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে ফেসবুকে প্রতিবন্ধী প্রজন্ম বলে আখ্যা দেওয়া কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। এ জন্য তার বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় আইনগত পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য ইতিমধ্যে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের শিক্ষা শাখা থেকে কালীগঞ্জ উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তাকে জরুরি চিঠি দেওয়া হয়েছে।