প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদ বলেছেন, উচ্চ আদালতের বিচারক নিয়োগে স্বচ্ছ ও জবাবদিহিমূলক করার উদ্যোগ নেওয়া হবে।
সোমবার (১১ নভেম্বর) ব্যাংককে অনুষ্ঠিত রিজিওনাল কনফারেন্সে তিনি এ কথা বলেন।
তিনি বলেন, একটি গণমুখী, স্বচ্ছ ও জবাবদিহিমূলক রাষ্ট্রকাঠামো বিনির্মাণে বাংলাদেশের জনগণের পরম অভিপ্রায় জুলাই-আগস্ট মাসে ছাত্র-জনতার স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণে সংগটিত গণবিপ্লবের মাধ্যমে প্রতিফলিত হয়েছে।
এই বিপ্লবের মধ্য দিয়ে সমাজে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় একটি দেশের জন্য স্বাধীন বিচার বিভাগ থাকা কতটা জরুরি তা পুনরায় উঠে এসেছে।
সুপ্রিম কোর্ট থেকে এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানানো হয়েছে। এই কনফারেন্সে এশিয়া ও প্যাসিফিক অঞ্চলের বিভিন্ন দেশের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।
প্রধান বিচারপতি বলেন, এশিয়া ও প্যাসিফিক অঞ্চলে কলোনিয়াল লিগ্যাসি হিসেবে যে আনুষ্ঠানিক বিচার ব্যবস্থা প্রচলিত রয়েছে, অনেক সময়ই তা গণপ্রত্যাশা পূরণে ব্যর্থ হয়। তারই সূত্র ধরে এই অঞ্চলের বিভিন্ন দেশের শত বছরের প্রচলিত ঐতিহ্যবাহী বিরোধ নিষ্পত্তি ব্যবস্থা বর্তমান প্রেক্ষাপট বিবেচনায় আধুনিক যুগে নতুন করে প্রাসঙ্গিক হয়ে পড়েছে।
ধর্ম-বর্ণ-শ্রেণি-অর্থনৈতিক অবস্থা নির্বিশেষে সব নাগরিকের জন্য অন্তর্ভুক্তিমূলক বিচার ব্যবস্থা নিশ্চিতকরণে বাংলাদেশের বিচার বিভাগ বদ্ধপরিকর মন্তব্য করে প্রধান বিচারপতি তৃণমূল পর্যায়ে আইনি প্রতিকার তথা কমিউনিটি জাস্টিস নিশ্চিতকল্পে বাংলাদেশের গ্রাম আদালতগুলোর সাফল্যের বিষয়টি তুলে ধরেন।
তিনি বলেন, সম্প্রতি বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট ক্যাপাবিলিটি অ্যাপ্রোচ প্রয়োগ করে কেবলমাত্র অসচ্ছল ব্যক্তি লিগ্যাল এইডের সহায়তা পাবেন; এই সংকীর্ণ ধারণাকে আরও বিস্তৃত করা হয়েছে। ফলে বর্তমানে আর্থিক অসংগতি ছাড়াও অন্য যে কোনো প্রতিকূলতার কারণে কোনো ব্যক্তি আইনজীবী নিয়োগে ব্যর্থ হলে আইনি সহায়তার জন্য আবেদন করতে পারেন।
বিচার বিভাগের স্বাধীনতা নিশ্চিতকরণসহ বিচার বিভাগ সংস্কারে নিজের ঘোষিত রোডম্যাপের রূপরেখা তুলে ধরেন প্রধান বিচারপতি।
তিনি উল্লেখ করেন, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা নিশ্চিতকল্পে সরকারের কাছে বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের পক্ষ হতে পৃথক বিচার বিভাগীয় সচিবালয় প্রতিষ্ঠার প্রস্তাবনা তুলে ধরা হয়েছে। এছাড়া, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা নিশ্চিতকল্পে বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট সুপ্রিম জুডিসিয়াল কাউন্সিলকে পুনরুজ্জীবিত করেছে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
উচ্চ আদালতের বিচারক নিয়োগে স্বচ্ছ ও জবাবদিহিমূলক প্রক্রিয়া চালু করার বিষয়ে শিগগিরই উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে বলেও জানান তিনি।
এছাড়া, তিনি জনবান্ধব বিচার ব্যবস্থা বিনির্মাণের মাধ্যমে ইক্লুসিভ জাস্টিস নিশ্চিতকরণে এশিয়া-প্যাসিফিক অঞ্চলের জন্য আঞ্চলিক কৌশলপত্র প্রণয়নে আন্তঃরাষ্ট্রীয় সহযোগিতা বৃদ্ধির আহ্বান জানান।